পাঠান ও মুঘল যুগের বাঙ্গলার স্বাধীন হিন্দু রাজ্য মল্লভূম (জ্যোতিষমান সরকারের কলমে)

বিষ্ণুপুর রাজবাড়ী
●মল্লরাজ্যের প্রতিষ্ঠা:৬৯৪ খ্রীস্টাব্দে রাজা আদিমল্লের নিজেহাতে প্রতিষ্ঠিত রাজপাট। সেযুগের দুর্ধর্ষ মল্লযোদ্ধা হিসাবে তাঁর দিগ্বিদিক খ্যাতির কারণে মল্লরাজ নামেই লোকে বেশি চিনতে শুরু করে তাঁকে। আর এই মল্লরাজদের হাতেই সযত্নে গড়ে উঠতে থাকে মল্লভূম, আজকের বিষ্ণুপুর। আদি মল্লের সিংহাসনে আরোহণের সময়কাল থেকে মল্লাব্দ গণনা শুরু হয়।বলা হয়ে থাকে যে ভাদ্র মাসে (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) ১০২ টি বাংলা ক্যালেন্ডারে ইন্দ্র দ্বাদশীর দিন থেকে মল্লাব্দ আরম্ভ হয়েছিল সেই হিসাবে আজ 1327 মল্লাব্দ। রাজ কূল পঞ্জী অনুসারে আদি মল্লের রাজমহিষীর নাম চন্দ্রকুমারী ছিল।
●তুর্কি আক্রমণ প্রতিরোধ :মনোরঞ্জন চন্দ্র মল্লভূম বিষ্ণুপুরের 122 পৃষ্ঠায় বলেনশৈব সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করতে গেলে প্রথমেই আমাদের উকি মারতে হয় গোকুলনগরের গন্ধেশ্বর শিবমন্দিরের শ্রীঅঙ্গনে। গন্ধেশ্বর শিবের পুণ্যাঙ্গনে চোখ বুলালেই নজরে পড়ে ধ্বংসস্তূপের বিভীষিকা, স্মৃতিপটে জেগে ওঠে তুর্কী আক্রমণের ভয়াবহতা। ১২০০ খ্রীষ্টাব্দ। আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন লুটেরা তুর্কী সৈন্যের দল বিষ্ণুপুরের প্রাচীন রাজধানী প্রদ্যুম্নপুরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে আক্রমণ করল তৎসংলগ্ন গোকুলনগরকে।গোকুলনগরের উত্তর প্রান্তে স্বর্ণদহ অপভ্রংশে সলদাতে ছিল ডুবনেশ্বর শিবমন্দির। ভুবনেশ্বর মন্দিরাঞ্চল তছনছ করে অতিকায় ভুবনেশ্বর শিবলিঙ্গ উৎপাটন করে শিবলিঙ্গের নীচে প্রোথিত প্রতিষ্ঠাকালীন মণি-মাণিক্যাদি নবরত্ন অপহরণ করে তাদের নজর পড়ে গন্ধেশ্বর শিবমন্দিরের ওপর। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করি, ভুবনেশ্বর শিবের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রস্তর নির্মিত রত্নাসনটি অধুনা নির্মীয়মাণ ভুবনেশ্বর শিব মন্দিরে সংরক্ষিতরয়েছে। গন্ধেশ্বর শিবমন্দিরের উত্তর দিকে মন্দির সংলগ্ন অবস্থায় রয়েছে কাতরা নামক পুষ্করিণী এবং উক্ত শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে তার চতুষ্পার্শ্বে নির্মিত হয়েছিল, বাণেশ্বর, দানেশ্বর, সিদ্ধেশ্বর, সর্বেশ্বর, পাতালেশ্বর প্রভৃতি নামাঙ্কিত অসংখ্য শিবলিঙ্গের জন্য অসংখ্য ছোট ছোট শিবমন্দির। তুর্কী সৈন্যগণ ঐসব মন্দির ভাঙচুর করে এবং দেবসম্পত্তিঅপহরণ করে নির্বিচারে। এবার পালা গদ্ধেশ্বর শিব ও শিবমন্দিরের।গন্ধেশ্বর মন্দিরের অভিমুখে যাওয়ার পথে মল্লবাহিনী প্রতিরোধের মুখে পড়ে তুর্কিরা পলায়ন করে মথুরাপুর অভিমুখে।
মহারাজা রাম মল্ল:119 পৃষ্ঠায় তিনি বলেনরাম মল্ল ছিলেন শৌর্যবান, বীর্যবান, প্রবল পরাক্রান্ত রাজা। রাজা জগৎ স্বপ্নের বিষ্ণুপুরকে একটি শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত করার উদ্দেশ্যে তিনি বহু দুর্গ নির্মাণ করেন। বহুবিধ অস্ত্রশস্ত্র তৈরী করান। দুর্গ, অস্ত্রসজ্জা এবং সামরিক শক্তিতে বিষ্ণুপুরকে তিনি এতই উন্নত করেছিলেন যে তার প্রবল প্রতাপান্বিত শত্রুগণও তাকে আক্রমণ করার ঔদ্ধত্য দেখাতে সাহস করেননি কদাচিৎ। রাম মন্ন প্রসঙ্গে তরুণদেব ভট্টাচার্য তার ‘পশ্চিমবঙ্গ দর্শন বাঁকুড়া’ পুস্তকের ৯০ পৃষ্ঠাতে লিখেছেন, “তিনি বিষ্ণুপুর গড়ের ও সৈন্যবাহিনীর সংস্কার করেছিলেন বলে প্রবাদ আছে। এমন কি সৈন্যদের ইউনিফর্মের দিকেও নজর দিয়েছিলেন। এজন্য আলাদা কর্মচারীও নিযুক্ত হয়েছিল। প্রবাদটি ভিত্তিহীন নাও হতে পারে। তুর্কী আগমনের পর রাজশক্তি নতুন করে সংগঠিত করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল।” ১১৮৫ খ্রীষ্টাব্দ থেকে প্রায় ২৪ বছর চুটিয়ে রাজত্ব করে ১২০৯ খ্রীষ্টাব্দে ছেদ পড়ে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল জীবনে।রাম মল্লের মৃত্যুর পরই আবার যেন ঝিমিয়ে পড়ে, স্তিমিত হয়ে পড়ে বিষ্ণুপুরের শ্রীবৃদ্ধি, সমৃদ্ধি তথ্য সার্বিক উন্নতি। কারণ রাম মন্নের উত্তরপুরুষ রূপে গোবিন্দ মল্ল রাজা হন। গোবিন্দ মল্লের পর ভীম মল্ল সিংহাসনে বসেন। তার রাজত্বকলে “ভীম মল্ল পাত্রহাটি গ্রামে শ্যামচাদ দেবতার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে প্রবাদ আছে। পাত্রহাটি মৌজাটি নাকি এজন্যে শ্যামচাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। মৌজাটি দামোদরের তীরবর্তী পখল্লা গ্রামের সংলগ্ন ছিল। প্রবাদটি সত্য হলে ভীম মল্লের সময় মল্লভূমের সীমানা দামোদর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ হয়েছিল।” ভীম মল্ল সম্বন্ধে এ তথ্য পরিবেশন করেছেন তরুণদেব ভট্টাচার্য। ভীম মল্লের পর কাটার মল্ল রাজা হন এবং এঁরা রাজত্ব করেন ১২০৯ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১২৯৪-৯৫ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত। প্রায় শত বৎসরের রাজত্বকালে পূর্বোক্ত তিনজন রাজা এমন কিছু করে যান নি যা নিয়ে লেখা যায় ইতিহাস। ১২৯৫ খ্রীষ্টাব্দে মল্লভূমের রাজসিংহাসনে উপবিষ্ট হন সপ্তত্রিংশতম মহারাজ পৃথ্বী মল্ল।
● মহারাজা বীর মল্ল:৪৭ তম রাজা বীর মল্লের সময়কালে কালাপাহাড় বিষ্ণুপুর আক্রমণ করে।সলদার যুদ্ধ:এ বিষয়ে মল্লভূম বিষ্ণুপুর গ্রন্থে ১৩৩ পৃষ্ঠায় মনোরঞ্জন চন্দ্র বলেন “মাণিকলাল সিংহের লেখা থেকে বোঝা যায় তার রাজত্বকাল ন্যূনতম ১৫৪৫ খৃষ্টাব্দ থেকে ১৫৮১ খৃষ্টাব্দ। এই সময়ের পেক্ষাপটে মাণিক বাবু বীর মল্ল সম্বন্ধে যে তথ্য পরিবেশন করেছেন তা অভিনব। তিনি লিখেছেন, “বীর মল্লের আমলে ১৫৬৪ খৃষ্টাব্দ হইতে ১৫৭৬ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত কাল অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ। এই মধ্যবর্তী কালের মধ্যেই শেরশাহ এবং তাঁহার বংশধরগণের পতন ঘটিয়াছে। ১৫৬৫ খৃষ্টাব্দে সুলেমান কররানি, কালাপাহাড় প্রমুখ প্রবল পরাক্রান্ত আফগান নায়কদের পুনঃপুনঃ আক্রমণে রাঢ়, বঙ্গ, উড়িষ্যা সর্বদা ত্রস্ত। সমগ্র উড়িষ্যা সুলেমান কররানি জয় করিয়াছেন; কালাপাহাড় তথ্য কালিদাস গজদানী হিন্দু মন্দির, হিন্দু দেবদেবীর বিগ্রহ ভাঙিয়া তছনছ করিতেছেন। এ হেন চরম বিপর্যয়ের মুখে বীর মল্ল যে টিকিয়া ছিলেন এবং তাঁহার পূর্ব পুরুষদের প্রতিষ্ঠিত দেব-বিগ্রহগুলি রক্ষা করিয়াছিলেন তাহা ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়…. ……….. .. এই অরণ্যদুর্গে মল্লরাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পর ১৫৭৫খৃষ্টাব্দে দায়ুদ খাঁ একবার মল্লভূম আক্রমণ করেন, কিন্তু জয় করিতে পারেন নাই। বিষ্ণুপুরবনদুর্গের দুই মাইল উত্তরে বিড়াই নদীর তীরে এই যুদ্ধে দায়ূদ সম্পূর্ণভাবে পরাজিতহন। মল্লরাজাদের এই বিজয় কাহিনী অসম্ভব নয়।… ইহারই অনতিকাল পরে ১৫৭৬ খৃষ্টাব্দে, ১২ই জুলাই-এর রাজমহলের যুদ্ধে রাজা টোডার মল্ল এবং খান-ই-খানানের দ্বারা হতভাগ্য দায়ুদ সম্পূর্ণভাবে পরাজিত এবং নিহত হন।”
●বীর হাম্বীর মল্ল: বীর হাম্বীরের বিষয়ে মনোরঞ্জন চন্দ্র যা বলেছেন তা হলো এরকম“বাংলার এক সংকটময় সময়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন হাম্বীর মল্ল। একদিকে মোগল-পাঠানের লড়াইয়ে বিধ্বস্ত বাংলা। অপরদিকে হাম্বীর মল্ল রাজা হবার কিছুদিন পূর্বে তৎকালীন উড়িষ্যার রাজা মহামান্য হরিচন্দন মুকুন্দদেব জয় করে নেন বাংলা দেশের ত্রিবেণী পর্যন্ত। এদিকে কররানী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলেমান কররানী তখন বাংলা ও বিহারের সুলতান। তার ধর্মদ্বেষী সেনাপতি কালাপাহাড়, মুকুন্দ দেবকে বাংলা থেকে উচ্ছেদ করে জয় করে নেন উড়িষ্যা এবং শ্রীশ্রীজগন্নাথ দেবের শ্রীমূর্তি লুণ্ঠন করে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেন চিল্কা হ্রদে। এই রকম এক সর্বনাশা মুহূর্তে কিশোর বয়সে রাজা হলেন হাম্বীর মল্ল। উঠতি বয়সের দুর্দম্য বাসনা। রক্তে দিগ্বিজয়ের নেশা। মল্লভূমকে বাংলার স্বাধীন আদর্শ রাষ্ট্র রূপে গঠনের স্বপ্নে বিভোর। এদিকে আবার বহিঃশত্রুর আক্রমণের ভয়।মোগল, পাঠান ও সুলেমান সেনাপতি কালাপাহাড়ের অকস্মাৎ আক্রমণের আশঙ্কায় সদা শঙ্কিত হাম্বীর মল্ল প্রথমেই রাজ্যের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য হয়ে উঠলেন তৎপর। মল্লভূমের রাজধানী বিষ্ণুপুরের রাজদরবার ও রাজদুর্গকে কেন্দ্র করে স্তরে স্তরে পর পর সাত স্তবক সুগভীর পরিখা কাটিয়ে নির্মাণ করলেন সুপরিকল্পিত জল-দুর্গ। পরিখার পাড়ে পাড়ে বিষাক্ত কণ্টকাদি বৃক্ষ ও লতাগুল্ম রোপণ করালেন স্থানে স্থানে। পাশপাশি নির্মাণ করালেন প্রচুর কামান, আগ্নেয়াস্ত্র ও বন্দুক। পরিখার সুউচ্চ পাড়গুলিতে থরে থরে সাজিয়ে রাখলেন শত শত কামান। “শুধু বিষ্ণুপুর রাজধানী রক্ষার জন্যই যে এইরকম খানা কাটান ও তার পাড়ে কামান বসান হোল তা নয়, রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় এই রকম গড় তৈয়ারী করা হোল, আর তাদেরও চার ধারে খানা খুঁড়িয়ে, পাড় তৈয়ারী করে, কামান বসানোর ব্যবস্থা হোল। আর এই সব গড়ে বা দুর্গে এক এক জন করে শাসনকর্তা রাখা হোল।……………. … মোগল বা পাঠান রাজাদের কেহ মল্লরাজ্য আক্রমণ করতে পারে ভেবে রাজা বীর হাম্বীর রাজধানী বিষ্ণুপুর সুরক্ষিত করবার জন্য চেষ্টা করতে লাগলেন। বর্তমানে যে দুটি দুর্গ দেখা যায় সে দুটি তিনি নিজে তৈরী করিয়েছিলেন। প্রধান দুর্গটির নির্মাণের কৌশল দেখলে আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়। প্রায় তিন শত বৎসর আগে ঐ দুর্গটি তৈরী হয়েছিল। কিন্তু দুর্গের বাইরের সুদৃঢ় দেওয়াল দেখলে মনে হয় না যে এটি এতকালের পুরাতন! দুর্গের ছাদের উপরে কামান সাজান থাকত এবং সেখানে সুশিক্ষিত সৈন্যরা বন্দুক ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সর্বদা হাজির থাকত। বীর হাম্বীর নিজে সৈন্যদিকে যুদ্ধবিদ্যা ও অস্ত্রচালনা শিক্ষা দিতেন। রাজ্যের তেজস্বী, চতুর যুবকদিগকে সৈন্যদলে ভর্তি করা হত। বীর হাম্বীরের সময়ে এত সুশিক্ষিত সৈন্য ও যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র ছিল যে তার আগের ও পরের কোন মল্লরাজার তত ছিল না। প্রথম দুর্গটি পার হলেই শত্রুরা সহজে রাজধানীতে ঢুকতে পারত না। প্রথম দুর্গের পরেই একটি গভীর খাদ—তাতে বর্ষাকালের নদীর মত সব সময়ে সোঁ সোঁ করে জলের স্রোত বয়ে যেত— তার পরেই দ্বিতীয় দুর্গ। দ্বিতীয় দুর্গের ছাদের কথা বলেছি। নীচে দু’ধারে সৈন্যেরা বন্দুক নিয়ে সর্ব্বদাই প্রস্তুত থাকত। দুর্গটি এমন ভাবে তৈরী যে মল্ল-সৈন্যেরা দুর্গের ভিতর থেকে শত্রু সৈন্যদের উপর গুলি ছুঁড়ত, কিন্তু খুব কাছে এলেও শত্রু সৈন্যেরা মল্লসৈন্যদিকে দেখতে পেত না। বীর হাম্বীরের সময় পাঠান সেনাপতি দায়ূদ খাঁ বিষ্ণুপুর আক্রমণ করেন। মল্লরাজার এমন বন্দোবস্ত ছিল যে, শত্রু রাজ্যের সীমানার অনেক দূরে আসতে থাকলেও রাজার নিকটে ঠিক সংবাদ আসত, এবং রাজধানী বিষ্ণুপুরের চার পাঁচ মাইল দূর থেকেই যুদ্ধ আরম্ভ হত। এবারও তাই হল। দায়ূদ খাঁয়ের আসার সংবাদ পেয়েই রাজা বীর হাম্বীর শীঘ্র সৈন্যদিকে সুসজ্জিত করে বন্দুক ও বড় বড় কামান নিয়ে স্বয়ং যুদ্ধ করতে চললেন। শত্রুকে বাধা দিবার স্থান ঠিক করে সেনাপতিদিকে সৈন্য চালনা ও যুদ্ধ করবার কৌশল শিক্ষা দিয়ে নিজে রাজপুরী রক্ষার জন্যে দুর্গে ফিরে এলেন। দায়ূদ খাঁও প্রচুর সৈন্য নিয়ে মল্লসৈন্যদিকে আক্রমণ করলেন।”যুঝঘাটি ও মুণ্ডমালাঘাটের যুদ্ধ:“প্রচণ্ড যুদ্ধ চলল দিনের পর দিন রাতের পর রাত। তেমন যুদ্ধ মল্লসৈন্যেরা কখনও করে নাই রাজ্যবাসীরাও কখনও দেখে নাই।…………… …… বীর হাম্বীর রাজপুরী রক্ষার জন্যে দুর্গের মধ্যে ছিলেন—যুদ্ধের সংবাদ জানবার জন্যে মিনিটে মিনিটে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে চর পাঠাতেন। মল্লসৈন্যরা প্রবল বিক্রমে যুদ্ধ করল— তাদের বিক্রম, সাহস ও যুদ্ধের কৌশল দেখে পাঠান সৈন্যেরা অবাক্ হয়ে গেল— শেষে দায়ূদ খাঁ সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়ে গেলেন। তার সৈন্যেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যে যেদিকে পারল পালিয়ে গেল।” (চিত্র ও গল্পে বিষ্ণুপুর, পৃঃ – ২১-২৪)পরাজিত পাঠান সৈন্যদের মৃতদেহ স্তূপাকৃতিতে পড়ে রইল যুঝঘাটি বা মুণ্ডমালা ঘাটের প্রান্তরে।‘দায়ূদ খাঁ— বীর হাম্বীর’ যুদ্ধের তীব্রতা এবং ভয়াবহতা বোঝাতে গিয়ে শ্রদ্ধেয় “ফকির নারায়ণ কর্মকার তার ‘বিষ্ণুপুরের অমর কাহিনী’ গ্রন্থের ২৭ পৃষ্ঠাতে লিখেছেন, “প্রায় লক্ষাধিক সৈন্য ও সেই মত রণসম্ভার নিয়ে অতর্কিতে দায়ূদ খাঁ এসে ছাউনি ফেলেন বিষ্ণুপুরের নিকটবর্তী রাণীসাগর নামক গ্রামে।মহারাজ হাম্বির মল্ল তার জন্যে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। সেই আকস্মিক সঙ্কটে কিছু বিব্রত হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু তার চির আরাধ্যা মৃন্ময়ীদেবীর কৃপায় সে ত্রুটি তার পূর্ণ হয়ে যায়। তখন তিনি এমন শোচনীয়ভাবে তাদের ধ্বংস করেন যে পাঠান সৈন্যের মৃতদেহের স্তূপে পূর্ণ হয়ে যায় যুঝঘাটি ও মুণ্ডমালাঘাটের প্রান্তর। অবরুদ্ধ অবস্থায় প্রাণমাত্র সম্বল করে মৃত্যুর জন্যে প্রতীক্ষা করতে থাকেন দায়ুদ খাঁ। কিন্তু সেই শোচনীয় পরিণতি তার হয় না।”বীর হাম্বির তাকে মুক্তি দেন। ………“কিন্তু মুণ্ডমালাঘাট নাম হয়েছে সেখানে অন্য কারণবশত। সেখানে পরিখা পাহাড়ের ওপর এক ভয়ঙ্করী কালী প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত ছিল। আর শত্রুর মনে ভয় জাগাবার জন্যে তার কণ্ঠে সত্যকার নরমুণ্ডের মালা দেওয়া থাকত। তাই এখানের নাম মুণ্ডমালাঘাট। এর দক্ষিণে বিস্তীর্ণ পরিখা পাহাড়, উত্তর ও পশ্চিমে বিড়াই নদী এবং পূর্বে বিখ্যাত দ্বারকেশ্বর নদ ও বিড়াই নদীর সঙ্গমস্থল উক্তস্থানকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ করে রেখেছে। আর ঐ মুণ্ডমালাঘাটেরই পশ্চিম দিকে অবস্থিত স্থানের নাম যুঝঘাটি। এবং দায়ূদ খাঁর সঙ্গে যুদ্ধের পরবর্তীকাল থেকে অনেকে সেখানকে দায়ুদঘাটা বলে থাকেন। বর্তমানে সেখানের বিড়াই নদীকে খানা বিড়াই বলা হয়।”আনুষঙ্গিকভাবে উল্লেখ করি, মুণ্ডমালাঘাটের সন্নিকটে একটি দুর্গ ছিল। সেই দুর্গ আজ আর নেই। নেই ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন মাত্র। তবে কয়েক দশক আগে বন্যার স্রোতে নদীর মাটি ক্ষয়ে ক্ষয়ে বেশ বড় একটি কামান বেরিয়ে পড়ে মাটির নীচথেকে। উক্ত কামানটি বিষ্ণুপুরের বর্তমান ট্রেজারি বিল্ডিং’-এর সম্মুখে সযত্নে সংরক্ষিত আছে।“কথিত আছে—দায়ুদ খাঁর সেই অতর্কিত আক্রমণে বিব্রত হওয়ার জন্য তারপরই মহারাজ বীরহাম্বির মল্লভূমের সীমান্ত থেকে রাজধানী বিষ্ণুপুর পর্যন্ত শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য ও সংকেত সংবাদ আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তার জন্যে বিষ্ণুপুর থেকে রাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৬ মাইল পর পর উঁচু স্তম্ভ নির্মাণ করান। এখানের চলতি ভাষায় বলা হয় তাকে মাচান। এখনও মল্লভূমের স্থানে স্থানে সেই মাচানের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।বাঁকুড়া সহরের মাচানতলা মহল্লায় উক্ত মাচানের ধ্বংসাবশেষ এখনও বর্তমান। আর তাই সেখানের নাম মাচানতলা মহল্লা।” (বিষ্ণুপুরের অমর কাহিনী, পৃঃ-২৮)।”…… ….“দায়ূদ খাঁকে পরাজিত করে বীর হাম্বীর নগর উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছেন। এমন সময় শুরু হল এক নতুন উপদ্রব। “মান্দারান-জাহানাবাদের যুদ্ধ:“পাঠান সুলতান দায়ূদ খাঁ-এর পরাজয়ে তারা হয়ে উঠলেন প্রতিহিংসা পরায়ণ। সুযোগের অপেক্ষায় বসে ছিলেন ওৎ পেতে। ষোড়শ শতাব্দীর একেবারে শেষের দিকে ১৫৯০/৯১ খ্রীষ্টাব্দে উত্তর উড়িষ্যার একচ্ছত্র অধিপতি দুর্ধর্ষ আফগান শাসক কতলু খান লোহানীর নেতৃত্বে তারা সংঘবদ্ধ হয় এবং মোগল সাম্রাজ্যে শুরু করে নিদারুণ উপদ্রব। কতলু খান ওরফে কোতুল খাঁ অবশেষে ছাউনী ফেলেন বর্তমান বিষ্ণুপুর মহকুমার অন্তর্গত কোতুলপুর অঞ্চলে। লুণ্ঠন করেন গ্রামের পর গ্রাম। পাঠান অধিপতি কোতুল খাঁকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য মোগল সম্রাট আকবর শাহের নির্দেশে সেনাপতি মান সিংহ, পুত্র জগৎ সিংহকে নিয়ে হাজির হলেন কোতুলপুর সন্নিকটস্থ জাহানাবাদে। আজকের আরামবাগ শহর অতীতের জাহানাবাদের নামান্তর মাত্র।পাঠানের বিরুদ্ধে মোগল সৈন্যেরা রণং দেহি মনোভাব নিয়ে যখন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তৈরী সেই সময় পাঠান শিবির থেকে আসে সন্ধির প্রস্তাব পাঠান অধিপতি কোতুল খাঁ-এর এই সন্ধি প্রস্তাবের অস্তরালে লুকিয়ে ছিল এক দুরভিসন্ধি। বিচক্ষণ রাজা বীর হাম্বীর জগৎ সিংহকে এই বিষয়ে সাবধান করে দেন পূর্বেই। কিন্তু স্বীয় শক্তিমত্তায় দর্পিত জগৎ সিংহ বীর হাম্বীরের কথায় কর্ণপাত করেন না। ফলতঃ একদিন গড়মান্দারণ যাবার পথে অকস্মাৎ আক্রান্ত হয়ে পাঠানদের হাতে বন্দী হন জগৎ সিংহ। জগৎ সিংহের এই ভয়াবহ পরিণতির খবরে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন স্বয়ং মান সিংহ। রণবীর বীর হাম্বীর তখন পাঠান অধিপতি কোতুল খাঁকে আক্রমণ করে বন্দীমুক্ত করেন জগৎ সিংহকে। এর ফলে মান সিংহ তথা মোগল শাসকের সাথে বীর হাম্বীরের গড়ে ওঠে এক সুসম্পর্ক। পক্ষান্তরে কোতুল খাঁ তথা পাঠান সেনাবাহিনী পরিণত হয় চিরশত্রুতে। এই শত্রুতার বশবর্তী হয়ে তারা বিষ্ণুপুরের অধীনস্থ গড়মান্দারণের সামস্ত সর্দার বীরেন্দ্র সিংহকে হত্যা করেন এবং গড়মান্দারণ দুর্গকে সম্পূর্ণরূপে ধূলিসাৎ করেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করি, সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের পটভূমিকা রচিত হয় এই গড়মান্দারণের অধুনা বিলুপ্ত শৈলেশ্বর শিবমন্দির ও শিবলিঙ্গকে কেন্দ্র করে।”গড়মান্দারণ দুর্গ ধ্বংস করার অব্যবহিত পরেই মল্লবাহিনীর আক্রমণে মারা যান কোতুল খাঁ। কোতুল খাঁর সমাধি কোতুলপুরে বিদ্যমান এবং তাঁর নামানুসারেই স্থানটির নাম হয় কোতুলপুর। কোতুলপুর বিষ্ণুপুরের পূর্ব দিকে মাইল ২০ দূরে অবস্থিত। অপ্রত্যাশিত এই বিপর্যয়ে পাঠান সৈন্যদের সাহস ও মনোবল ভেঙে পড়ে। এমতাবস্থায় কোতুল খাঁর অসহায় পুত্র নাসির খাঁ যুদ্ধের পথ পরিহার করে সন্ধি করেনহাম্বীরের প্রতাপ এতই ছিল যে, বিষ্ণুপুরের ওপর থেকে কর চাপানোর চেষ্টা বাদশা আকবর হাম্বীরের জীবনকালে করেনি আকবর ।দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থার সুবিধার জন্য তিনি সমগ্র মল্লভূম জুড়েই উঁচু উঁচু স্তম্ভ তৈরি করেছিলেন। শত্রু আক্রমণের খবর এতে তাঁর কাছে অনেক আগেই খুব সহজে পৌঁছে যেত। এই স্তম্ভগুলোকে তখন বলা হত ‘মাচান’। আজও বাঁকুড়ায় কোনো কোনো জায়গায় এইসব স্তম্ভের ভাঙা অংশ দেখা যায়। বাঁকুড়া স্টেশনের কাছে ‘মাচানতলা’ অঞ্চলের নামকরণের কারণও এটিই। যদিও নাম থাকলেও এই অঞ্চলের মাচানটি বহুকাল আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে।
●রঘুনাথ মল্ল:বিষ্ণুপুরের ইতিহাস বলতে গিয়ে রাজা বীরহাম্বিরের পরে যে রাজার কথা উঠে আসে তিনি হলেন রাজা রঘুনাথ মল্ল (প্রথম)। বৃন্দাবনে থাকাকালীন পরম ধার্মীক ও বৈষ্ণব রাজা বীরহাম্বির তাঁর পুত্র ধাড়ীহাম্বিরকে অভিষেক করিয়ে দেন নিজের জীবৎকালেই।
●কিন্তু ধাড়ীহাম্বিরের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁর ভাই রঘুনাথ সিংহাসন দখল করেন। বিষ্ণুপুরের রাজারা মুঘল বাংলার নবাবকে কর দিতেন না বীর হাম্বিরের সময় থেকেই। কিন্তু শাহজাহানের পুত্র শাহজাদা সুজা বাংলার সুবেদারী লাভ করার পর হঠাৎ বিষ্ণুপুর আক্রমণ করেন।রাণীবাঁধের যুদ্ধ :রাজা রঘুনাথ মল্ল পরাজিত হন বলে অনেকে দাবি করেন এবং দীনেশ সেন হলওয়েলের বিবরণ উল্লেখ করে এই দাবির অসারতা প্রমাণ করেছেন ।
●রাজা রঘুনাথ মল্লর সাথে সুজার সন্ধি : রাজা রঘুনাথ মল্লকে বন্দী করে রাজমহল নিয়ে যাওয়ার তত্ত্ব বললেও দীনেশ সেন বৃহৎ বঙ্গে এই মত সমর্থন করেননি।দীনেশ সেনের বৃহৎ বঙ্গের ১১১০ পৃষ্ঠায় বলেছেন” ১৭৬৫ খৃঃ অব্দে প্রকাশিত কলিকাতার শাসনকর্তা হলওয়েল সাহেবের বিবরণীতে লিখিত আছে : “কিন্তু এদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধায় বিষ্ণুপুর ভারতবর্ষীয় অঙ্গ রাজ্য হইতে সর্ব্বাপেক্ষা স্বাধীন রাজ্য, কারণ যে কোন সমস্থ রাজা ইচ্ছা করিলে বাধের মুখ খুলিয়া দিয়া বিপক্ষ পক্ষকে ধ্বংস করিতে পারেন। সুজা বাদসাহের রাজত্বের প্রারম্ভে তিনি বহু অশ্বারোহী সৈন্য পাঠাইয়া বিষ্ণুপুরের স্বাধীনতা হরণ করিতে ক্বতসঙ্কল্প হইয়াছিলেন কিন্তু বিষ্ণুপুরাধিপত্তি একটি বাধের মুখ খুলিয়া দেওয়াতে মোগল সৈন্য বিনষ্ট হইয়াছিল—তাহাদের একটিও জীবিত ছিল না। তদবধি বিষ্ণুপুর অধিকার করিতে আর কেহ চেষ্টিত বা সাহসী হয় নাই।…….. সুতরাং এই রাজারা কখনই মোগলদিগের অধীন হন নাই। “১১১১ পৃষ্ঠায় আরও বলা হয়েছে“জগৎময় যেন একটা উত্তপ্ত মরুভূমি, বিষ্ণুপুর তন্মধ্যে ওয়েসিসের মৃত। হুলওয়েল সাহেব লিখিয়াছেন, “In this district are the only vestiges of the beauty, purity, regularity, equity and strictness of ancient Indoostan Government. Here the property as well as the liberty of the people are inviolate, here no robberies are heard of either private or publie” (Interesting Historical, Events, by Holwell, published in 1785).ইহার মর্মার্থ—”এই জেলায় প্রাচীন হিন্দু শাসন-তন্ত্রের সৌন্দর্য্য, পবিত্রতা, নিয়ম শৃঙ্খলা এবং ন্যায়পরতার একখানি জীবন্ত চিত্র রহিয়া গিয়াছে; এই দেশের মত আর কোথাও তা নাই। প্রজাদের স্বাধীনতা ও সম্পত্তি এখানে হরক্ষিত, তাহাতে হস্তক্ষেপ করিযার সাধ্য কাহারো নাই। এখানে গোপনে অথবা প্রকাশে দ্যুবৃত্তি কোথাও সংঘটিত হয় না।”
ফরাসী পর্যটক এ্যাবি রেনেল লিখিয়াছেন—“ এই দেশকে প্রকৃতি এমন ভাবে নিরাপদ করিয়া রাখিয়াছেন যে অধিবাসীদের চরিত্রের মাধুর্য্য এবং হৃদয়ের আনন্দ সেই আদিকাল হইতে একভাবে চলিয়া আসিয়াছে। তাহাদের হস্ত কখনই নর-রক্তে রঞ্জিত হয় না। ইহারা চারিদিকে জলের দ্বারা এরূপ সুরক্ষিত যে, বাঁধ খুলিয়া দিলেই সমস্ত দেশ ডুৰিয়া যায়। কতবার বাহিরের শত্রু এই ভাবে ধ্বংস পাইয়াছে। ফলে আর কেহ ইহাদিগকে আক্রমণ করিতে সাহসী হয় না।” “সঠতার আশ্রয়ে রঘুনাথ মল্ল বন্দি:সুজা যেভাবে মল্লভূম রাজ রঘুনাথ মল্লকে বন্দী করেন তা হলো ১৫০পৃ মল্লভূম বিষ্ণুপুর (মনোরঞ্জন চন্দ্র) অনুসারে“কুলগুরু শ্রীনিবাস আচার্য গত হয়েছেন। শুরুদেবের জ্যেষ্ঠপুত্র বৃন্দাবনচন্দ্র রয়েছেন যাজীগ্রামে। ধর্মপ্রাণ রঘুনাথ চলেছেন গুরুপুত্রের কাছে দীক্ষা নিতে। সুজার তাঁবেদার বর্তমানের শাসক জানতে পারেন খবরটা এবং অতর্কিতে আক্রমণ করে বন্দী করেন রঘুনাথকে। পাঠিয়ে দেন সুজার কাছে। কারাগারে নিক্ষেপিত হন রঘুনাথ”তবে সেই অবস্থাতেও সুজা তাঁকে মুক্তি দেন ।সুজা কেন সন্ধি করেন তার সঠিক কারণ না জানা গেলেও অনুমিত হয় যে*১৬৪৪ সালে আওরঙ্গজেব এর ভগিনী জাহানারা অগ্নিকান্ডে আহত । তার সুগন্ধির বোতল থেকে নির্গত সুগন্ধীতে আগুন ধরে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনা মুঘল রাজপরিবারে সংকটের জন্ম দিয়েছিল।*মুঘল পরিবারে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা। রাজমহলে সুজার তৎক্ষণাৎ কিছু সৈন্যর প্রয়োজন ও আসন্ন যুদ্ধে সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতেই রঘুনাথ মল্লের সাথে সুজার সন্ধি হয়।*মল্লভূমের পুণরায় স্বাধীন রাজ্যের স্বীকৃতি ।১৬৪৫ সালে সাত মাসের জন্য তাকে মুঘল দরবার থেকে বহিষ্কার করা হয় যার ফলে কিছুকালের জন্য সঙ্কট কেটে যায়।●বীর সিংহ মল্ল :বীরসিংহের রাজত্ব লাভ। রাজসিংহাসন নিয়ে বিবাদ।রাজকুমার বলদেবের সিংহাসন লাভের আশায় দ্বিতীয় রাণী স্বর্ণময়ী দেবীর কাকা মাধব সিংহের হত্যা।দুই সৎ ভাইকে হত্যা ( রাজকুমার শূর সিংহ ও কৃষ্ণসিংহ হত্যা) ।দুর্জন সিংহের পলায়ন । পরবর্তীতে বলদেব সিংহের রোগে ভুগে মৃত্যু ও দুর্জন সিংহের প্রত্যবর্তন ও রাজত্ব লাভ 1691।মালিয়াড়ার যুদ্ধ:১৫৮ পৃষ্ঠা মল্লভূম বিষ্ণুপুরনৃশংস বীরসিংহকে সকলেই ঘৃণা করতেন মনে প্রাণে সিংহাসন থেকে সরিয়ে দেবার চক্রান্ত করতেন গোপনে গোপনে। কিন্তু সামনা-সামনি তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ছিল না কারো। কারণ কার্যে অসাধারণ দক্ষতার পাশাপাশি কঠোর ভাবে বিদ্ৰোহ দমনে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত এবং নিদারুণ নির্মম। এ প্রসঙ্গে অভয়াপদ মল্লিক মহাশয়ের ‘হিস্টরি অফ বিষ্ণুপুর-রাজ’ গ্রন্থের একটি বিশেষ অংশের বাংলা তর্জমা শোনাই আপনাদের। তিনি লিখেছেন—মালিয়াড়ার রাজা মণিরাম অঞ্চর্য একবার প্রঙ্গাদের উপর অত্যাচার করেন এবং বিষ্ণুপুরের রাজার আনুগত্য অস্বীকার করেন। এই সংবাদ শুনে বীরসিংহ কয়েকজন বরকন্দাজ সহ রাজস্ব আদায়কারী একজন রাজকর্মচারীকে পাঠিয়ে দেন মালিয়াড়াতে রাজকর্মচারী হাতিতে চড়ে এগিয়ে গেলেন মণিরামের প্রাসাদ অভিমুখে। তার আগমনের সংবাদ পেয়ে প্রাসাদের প্রবেশ তোরণ বন্ধ করে দেওয়াহয় আগেভাগে। তখন রাজকর্মচারীর নির্দেশে বরকন্দাজ সৈন্যগণ প্রবেশ তোরণের দরজা ভাঙতে শুরু করেন। মণিরাম মুর্শিদাবাদের নবাবের কাছে সরাসরি সাহায্য আশা করেছিলেন। সেই আশাতে বলীয়ান হয়ে তিনি তার ভ্রাতুষ্পুত্রকে মল্লসৈন্যদের হটিয়ে দেবার নির্দেশ দেন। আদেশ পাওয়া মাত্র মণিরামের ভ্রাতুষ্পুত্র তীরন্দাজ বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসেন এবং এলোপাথাড়ি তীর ছুঁড়ে ক্ষত-বিক্ষত করে দেন বিষ্ণুপুরের বরকন্দাজবাহিনীকে। তীরের আঘাতে মৃতপ্রায় হাতিতে চড়ে প্রাণ নিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বাঁচেন রাজকর্মচারী। বীর সিংহকে জানান সব কথা। প্রচণ্ড ক্রোধে ফেটে পড়েন। তিনি। উদ্ধত মণিরামকে শায়েস্তা করতে বিশাল এক সেনাবাহিনী দিয়ে পাঠিয়ে দেন সেনাপতিকে। আদেশ দেন মণিরামকে কেটে টুকরো টুকরো করতে।সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী নিয়ে সেনাপতি ঢুকে পড়েন মণিরামের প্রাসাদে। অতি সহজেই মণিরামকে পরাস্ত করেন। তারপর হাতে পায়ে বেঁধে বন্দী মণিরামকে টানতে টানতে নিয়ে আসেন মালিয়াড়া সন্নিকটস্থ সাবিয়াড়া গ্রামে এবং অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন রাজা বীর সিংহের অমানবিক আদেশ বন্দী মণিরামকে কেটে টুকরো টুকরো করে করেন হাজার টুকরো।মল্লভূমের পরিসীমা :১৩৮পৃষ্ঠা মল্লভূম বিষ্ণুপুর‘আইন-ই-আকবরী’ নামে একটি মোগল আমলের বই আছে। এই বইখানিতে লেখা আছে যে বিষ্ণুপুরের রাজার নিজের পনেরটি এবং তার অধীনে বার জন সামন্ত রাজার বারটি, দূর্গ বা গড় ছিল। সব গড়গুলির সঠিক বিবরণ এখনও জানা যায় নাই তবে ওন্দা থানার মধ্যে করাসুর গড়, কৃষ্ণগড়, অসুরগড়, শ্যামসুন্দর গড়, হোমগড় মেদিনীপুর জেলার মধ্যে রামগড় ৰেৱগড় (গড়বেতা), গোহালতোড় ধরাপাট হুগলী জেলার মধ্যে মন্দারগড়, কাকটার নিকট ভূমনীগড় প্রভৃতি গড়গুলির ধ্বংসাবশেষ বিষ্ণুপুরের অতীতকালের প্রতাপ প্রতিপত্তির এখনও প্রমাণ দিচ্ছে।” (মল্লভূম কাহিনী, পৃঃ – ১৫-১৬)।
* শোভা সিংহ ও তার বিদ্রোহী প্রজাবর্গ সংখ্যায় এতটাই অধিক ছিল যে বিদ্রোহীদের রোষানলের সামনে পড়ে সদ্য অধিষ্ঠিত বর্ধমান-আজমৎশাহী অঞ্চলের রাজা এবং মুঘল অনুগত কৃষ্ণরাম রায় সপরিবারে নিহত হলেন। এই শোভা সিংহ এবং ওড়িশার আফগান সর্দার রহিম খাঁ এর মিলিত জোটের সম্মুখে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মুঘল আধিপত্য প্রশ্নচিহ্নের মুখে এসে দাঁড়ায়। ঢাকায় বসে সুবাদার ইব্রাহিম খাঁ দিশাহারা হয়ে পড়েন।* চন্দননগরের ফরাসি বাণিজ্যকুঠির চিঠিপত্র অনুসারে তিনি কোন উচুঁ ভবন থেকে পড়ে মারা যান।শোভা সিংহের জীবনবসানের সাথে সাথে বিদ্রোহীদের কোমর ভেঙ্গে যায় এবং ঔরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজিমউস্সান ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দে রহিম খাঁ কে হত্যা করে।শোভা সিংহের মৃত্যুর পর তাঁর পিতৃব্য মহাসিংহ (এ যাবৎকাল কথিত ভাই নয়) বিদ্রোহের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।মুঘলদের প্রতি বিশেষ আনুগত্যের পুরস্কার হিসাবে ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁ বর্ধমান রাজ কীর্তিচন্দকে চন্দ্রকোণায় বিদ্রোহীদের শেষ ঘাঁটিও দখল করে এনে উপহার দেন। প্রভাবশালী বর্ধমান রাজশক্তির উদ্ভব এই সময় থেকেই।
●যুবরাজ থাকাকালীন রঘুনাথ সিংহ শোভা সিংহের কন্যা চন্দ্রপ্রভাদেবীকে বিবাহ করে জেষ্ঠ্যা মহিষীর মর্যাদা দেন। বিদ্রোহী শোভা সিংহের বিদ্রোহ দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন ।এর সাথেই তিনি লালবাঈ নামে জনৈকা মুসলিম নর্তকীকেও বিষ্ণুপুর নিয়ে আসেন, কথিত আছে এই লালবাঈ ছিলেন আফগান সর্দার রহিম খাঁ এর পত্নী।সঙ্গীত-নৃট্যে পটিয়সী, সুন্দরী মোহময়ী লালবাঈয়ের প্রেমে পড়ে রাজা রঘুনাথ সিংহ রাজ্যশাসন ভুলে গেলেন। লালবাঈয়ের জন্য এক মনোরম প্রাসাদ ও সুরম্য দীঘি(লালবাঁধ) প্রস্তুত করে সারাদিন তাতেই সময় অতিবাহিত করতে লাগলেন। পরম বৈষ্ণব বংশের রাজা সংস্কার ভুলে গিয়ে লালবাঈয়ের সাথে মুসলমানি খানা উপভোগ করতেন। এমতাবস্থায় রাজার চিত্ত এবং ইন্দ্রিয়ের উপর সম্পূর্ণঅধিকার কায়েম করে লালবাঈ রাজাকে এবং রাজ্যশুদ্ধু সকল প্রজাকে মুসলিম হয়ে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করলেন। বোধশক্তিহীন, ইন্দ্রিয়পরায়ণ রাজা রঘুনাথ সিংহ সামান্য আপত্তি জানালেও তাতে পরবর্তীতে সম্মত হয়ে যান। রাজ আদেশে রাজ্যের সকল প্রজাকে এত্তেলা পাঠানো হলো। বিষ্ণুপুর শ্মশানঘাটের নিকট নতুন মহলের পশ্চিমে যে ভোজনতলা বর্তমান, সেখানেই ১৭১২ খ্রিস্টাব্দের এক দুপুরে বিষ্ণুপুরের শত সহস্র নর নারীকে এক পংক্তিতে নিষিদ্ধ মাংস ভোজন করিয়ে জাতি-ধর্ম নাশের ব্যবস্থা করা হলো।
●কিন্তু ঈশ্বর সহায়, স্বামীর এই নির্লজ্জ মতিভ্রমের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়ে রুখে দাঁড়ান রাজমহিষী চন্দ্রপ্রভা দেবী, সাথে সাথ দিয়েছিলেন কিশোর পুত্র পরম বৈষ্ণব রাজা গোপাল সিংহ এবং মন্ত্রীমন্ডলী। লালবাঈয়ের তত্ত্বাবধানে যখন খাবার পরিবেশনের প্রস্তুতি চলছে, তখনই রাজমহিষীর নিক্ষেপ করা এক তীক্ষ্ণ বাণে রাজা রঘুনাথ সিংহের বুক বিদীর্ণ হয়ে গেল, রক্ষা পেল বিষ্ণুপুর। জয়ধ্বনি করে উঠল প্রজারা। মহারাণী চন্দ্রপ্রভাদেবী স্বেচ্ছায় স্বামীর সাথে সহমরণে গেলেন। লালবাঈয়ের প্রাসাদ চূর্ণবিচূর্ণ করে উত্তেজিত প্রজাগণ তাঁকে শিকল পরিয়ে লালবাঁধের জলে নিমজ্জিত করে। ১৮৯৬ সালে এই লালবাঁধ থেকেই একটি নরকঙ্কাল এবং কয়েকটি ভাঙ্গা মুসলমানি রন্ধনপাত্র উদ্ধার করা হয়।আজকেও, রাণী চন্দ্রপ্রভা দেবীর সহমরণের স্থান, শ্যামবাঁধের পশ্চিমে সতীকুণ্ড দেখিয়ে লোকে স্মরণ করে, ‘পতিঘাতিনী সতী।’
●গোপাল সিংহ (১৭৩০-১৭৪৫) ছিলেন ধার্মিক রাজা।১৭৪২ সালে ভাস্কর রাওয়ের নেতৃত্বে মারাঠারা বিষ্ণুপুর আক্রমণ করলে, তার বাহিনী কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গোপাল সিংহ সেনাবাহিনীকে দুর্গের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেন ও দুর্গ সুরক্ষিত করেন। তিনি নগরবাসীকে মদনমোহনের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেন।কথিত আছে, মদনমোহন সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত দলমাদল কামান মানুষের সহায়তা বিনাই নাকি গর্জে উঠেছিল। সম্ভবত মারাঠারা কঠিন দুর্গপ্রাকার ধ্বংস করতে না পেরে ফিরে গিয়েছিলেন। মারাঠারা এরপর রাজ্যের অপেক্ষাকৃত কম সুরক্ষিত অঞ্চলগুলিতে আক্রমণ চালায় ও অধিকার করে।এইটা নিতান্তই লোককাহিনী ও অতিরঞ্জিত করণ। রাজার সৈন্যদলই কামানের গর্জনে বিষ্ণুপুর দুর্গ রক্ষা করেন। মারাঠারা বিষ্ণুপুর ও বীরভূমের সীমান্ত অঞ্চলে এমন ভয়াবহ আক্রমণ চালান যে, এই একদা-সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলি দারিদ্র্যের অন্ধকূপে বন্দী হয়ে পড়ে। অনেকেই রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যান, এবং রাজ্য জনবিরল হয়ে পড়ে।১৭৬০ সালে দ্বিতীয় শাহ আলমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানের কালে মারাঠা সর্দার শেওভাট বিষ্ণুপুরকে সদর করেছিলেন।
●মারাঠা আক্রমণের পরবর্তীতে বিষ্ণুপুর নবাবদের কর দেওয়া বন্ধ করে ।চৈতন্য সিংহ 1745 তে অভিষিক্ত হন তিনিও ধার্মিক রাজা ছিলেন। কিন্তু তাকেও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।যথাক্রমে বর্ধমান রাজাদের সাথে দন্দ্ব,শোভা সিংহের বিদ্রোহ , মারাঠা আক্রমণের ফলে বিষ্ণুপুর রাজ্য খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে।তাঁর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দামোদর সিংহ নামে তার এক জ্ঞাতিভাই ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেন। দামোদর সিংহকে ব্যর্থ ও বিতাড়িত হয়ে পালিয়ে গিয়ে মুর্শিদাবাদ রাজদরবারে আশ্রয় নেন।সাংহাতগোলার যুদ্ধ:তিনি মুর্শিদাবাদের দরবারে সমর্থন আদায়ে সমর্থ হন।। প্রথমে সিরাজদ্দৌলা তাকে নিজ বাহিনী ধার দেন। দামোদর সিংহ অজয় নদ টপকে দামোদর সিংহ উত্তরাংশ দিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করে। সাঙ্ঘাটগোলাতে চৈতন্য সিংহের বাহিনীর সাথে নবাবের বাহিনীর সঙ্ঘর্ষ হয়।দামোদর সিংহ কোনক্রমে বেঁচে যান সেবার।কিন্তু চৈতন্য সিংহ নবাবের বাহিনীকে পরাজিত করেন।চৈতন্য সিংহ সিরাজদ্দৌলার এই কপটতার বদলা নিয়েছিলেন। পলাশীর যুদ্ধে বিষ্ণুপুর নিস্পৃহই ছিল। যদিও তাতে তেমনতেমন সুবিধা হয় নি।ইংরেজদের হাতে সিরাজের পরাজয়ের পর ।1760 তে দামোদর সিংহ পুণরায় মীর জাফরের সহায়তা লাভে সমর্থ হন। দামোদর সিংহকে আরও শক্তিশালী বাহিনী ধার দেন মীরজাফর। এইবার তিনি বিষ্ণুপুর দখল করতে সমর্থ হন। স্বাধীন রাজ্য বিষ্ণুপুরের স্বাধীনতা সূর্য অস্ত যায়।বন বিষ্ণুপুরের শেষ যুদ্ধ:দামোদর সিংহ এবার মীরজাফরের শরণাপন্ন হলেন। বিশাল এক সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী দিয়ে দামোদর সিংহকে সাহায্য করেন মীরজাফর। মহারাজ চৈতন্য সিংহ এবং সেনাপতি কমল বিশ্বাসের অনুপস্থিতির সুযোগে কোন এক দুর্যোগের দিনে দামোদর সিংহ সেই বিশাল ফৌজী সেনা নিয়ে অকস্মাৎ আক্রমণ করে বিষ্ণুপুর। অতর্কিত আক্রমণের জন্য তৈরী না থাকায় নবাবী সেনা অতি সহজেই ঢুকে পড়ে বিষ্ণুপুর রাজ্যে। কিন্তু দূর্গেপ্রবেশ করতে পারে না কিছুতেই গোলন্দাজ বাহিনীর অবিশ্রান্ত গোলবর্ষণে কাতারে কাতারে নিহত হয় নবাবী সেনা নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে দামোদর সিংহ পদ্দল খাঁ নামক জনৈক সেনাপতিকে উৎকোচ দেবার প্রলোভন দেখিয়ে সসৈন্যে ঢুকে পড়ে বিষ্ণুপুর-দুর্গে। দখল করে নেয় রাজসিংহাসন। ঘরভেদী বিভীষণ দামোদর সিংহের হাতে লাঞ্ছিত হবার ভয়ে চৈতন্য সিংহের জ্যেষ্ঠপুত্র মদনমোহন সিংহ সপরিবারে পালিয়ে যান কুচিয়াকোল দুর্গে। সেনাপতি পদ্দল খাঁয়ের বিশ্বাসঘাতকতা এবং দামোদর সিংহের বিষ্ণুপুর রাজসিংহাসন ছিনিয়ে নেওয়ার বিস্তারিত বিবরণ তিনি সত্বর পাঠিয়ে দেন ময়ূরভঞ্জে তার পিতার কাছে।(মল্লভূম বিষ্ণুপুর ,মনোরঞ্জন চন্দ্র ২০৯)